ঐক্যশ্রী স্কলারশিপে আবেদন করলেই পাওয়া যাবে ৩৩ হাজার টাকা। আবেদন পদ্ধতি জেনে নিন।

রাজ্য সরকারের তরফে পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যে সমস্ত স্কলারশিপ চালু করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি স্কলারশিপ হলো ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ।আজকের এই প্রতিবেদনটি পড়লে আপনারা ঐক্যশ্রী স্কলারশিপের অধীনে নাম নথিভুক্ত করার পদ্ধতি, আবেদনের জন্য আবশ্যক যোগ্যতা, অনুদানের পরিমাণ এবং আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সম্পর্কে জানতে পারবেন।

ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ কী: সংখ্যালঘু শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্যই পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু বিভাগ ও অর্থ নিগমের তরফে কার্যকরী এক বিশেষ স্কলারশিপ হল ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ। প্রসঙ্গক্রমে জানিয়ে রাখি যে, অনুদান প্রদানের সুবিধার খাতিরে ঐক্যশ্রী স্কলারশিপে প্রি ম্যাট্রিক, পোস্ট ম্যাট্রিক এবং মেরিট কাম স্কলারশিপ এই তিনটে ভাগে ভাগ করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা কোন কোর্সে পড়াশোনা করছেন এবং কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন তার ওপর নির্ভর করে তারা এই স্কলারশিপের অধীনে অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে।

আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক যোগ্যতা:
১. রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, পার্সি, মুসলিম, শিখ সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীরাই কেবলমাত্র ঐক্যশ্রী স্কলারশিপের অধীনে আবেদন জানাতে পারবেন।
২. এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র-ছাত্রীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। শুধু তাই নয়, এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে অনুমোদিত যেকোন সরকারি অথবা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয় পাঠরত হতে হবে।

আরও পড়ুন: আর দৌড়াতে হবে না সরকারি অফিস। এখন রেশন দোকানেই পাওয়া যাবে সমস্ত সরকারি সুবিধা।

৩. ঐক্যশ্রী স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, প্রথম থেকে দশম শ্রেণীতে ছাত্র-ছাত্রী সহ মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতকস্তরে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। এর পাশাপাশি স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি স্তরের শিক্ষার্থীরাও এই স্কলারশিপের অধীনে আবেদন জানাতে পারবেন।
৪. ঐক্যশ্রী স্কলারশিপের অধীনে নিজের নাম নথিভুক্তকরণের ক্ষেত্রে আবেদনকারী শিক্ষার্থীকে বিগত পরীক্ষায় নূন্যতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।

৫. প্রি ম্যাট্রিক এবং পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীর পরিবারের বাৎসরিক আয় ২ লক্ষ টাকা কিংবা তার চেয়ে কম হতে হবে। অন্যদিকে মেরিট কাম মিনস স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীর পরিবারের বাৎসরিক আয় ২,৫০,০০০ টাকার কম হতে হবে।
৬. একজন ছাত্র অথবা ছাত্রী কেবলমাত্র একটি স্কলারশিপের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন অর্থাৎ রাজ্য সরকারের অধীনস্থ অন্য কোন স্কলারশিপের আওতায় অনুদান পাচ্ছেন এমন ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের অধীনে আবেদন জানাতে পারবেন না।

অনুদানের পরিমাণ: প্রিম্যাট্রিক স্কলারশিপের আওতাধীন প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা প্রত্যেক বছরে ১,১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১১,০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতি বছর ১০,২০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর যেসব শিক্ষার্থীরা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে তারা প্রতি বছর ১১,৯০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপের আওতাধীন ভোকেশনাল এবং টেকনিক্যাল কোর্সের অধীনে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছেন তারা প্রতিবছরে ১৩,৫০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন।

যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা হোস্টেলে থেকে ভোকেশনাল এবং টেকনিক্যাল কোর্সের অধীনে পড়াশোনা করছেন তারা প্রত্যেক বছরে ১৫,২০০ টাকার অনুদান পান। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপের আওতায় প্রতিবছরে ৬,৬০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। হোস্টেলে থেকে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করছেন তাদের ৯,৬০০ টাকার অনুদান থাকেন। অন্যদিকে যেসকল ছাত্র-ছাত্রীরা মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, আইন সহ বিভিন্ন প্রকার প্রোফেশনাল কোর্সে পড়াশোনা করছে তারা প্রতি বছরে ২৭,৫০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। আবার যেসমস্ত শিক্ষার্থীরা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতে তারা প্রতি বছরে ৩৩,০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন।

আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক নথিপত্র:
শেষ পরীক্ষার মার্কশীট।
মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড।
নতুন শ্রেণীতে অথবা কোর্সে ভর্তির রশিদ।
স্থায়ী বাসিন্দা সার্টিফিকেট।
শিক্ষার্থীর ইনকাম সার্টিফিকেট।
ব্যাংকের পাস বই।
পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
কাস্ট সার্টিফিকেট।

Aikyashree Scholarship (ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ)

আবেদনের প্রক্রিয়া: ঐক্যশ্রী স্কলারশিপের অধীনে নিজের নাম নথিভুক্তকরণের প্রক্রিয়াটিকে সহজ করে তোলার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে এক বিশেষ ওয়েবসাইট কার্যকর করা হয়েছে। এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার পর ফর্ম পূরণ এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।

অফিসিয়াল ওয়েবসাইট – Link