রূপের থেকে গুণের কদর বেশি, প্রমাণ করে দিলেন দীপ্তি জীবঞ্জি, ষষ্ঠদশ পদক এলো ভারতের ঝুলিতে।
দীপ্তি জীবঞ্জি হলেন তেলেঙ্গানার একজন অ্যাথলিট খেলোয়াড়। তার জন্ম ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৩ সালে। বর্তমানে তার বয়স ২০ বছর।
প্যারাঅলিম্পিকে জিতে একের পর এক সাফল্য এনে দিয়েছিল ভারতীয় অ্যাথলিটরা। এখনো পর্যন্ত ভারতের ঝুলিতে ১৫ টি পদক জিতেছেন ভারতের অ্যাথলিট খেলোয়াড়রা। এদের মধ্যে ছিলেন অবনী লেখারা, নীতেশ কুমার ও সুমিত আন্টিল। স্বর্ণপদক পেয়ে ভারতকে তারা গৌরবান্বিত করেছে। এবার এই ঝুলিতে যুক্ত হল আরো এক পদক। আর এই পদক এনে দিলেন দীপ্তি জীবঞ্জি। প্যারিসের প্যারাঅলিম্পিকের ৪০০ মিটারে দৌড়ে টি টুয়েন্টি ইভেন্টে ৫৫.৮২ সেকেন্ডের মধ্যে শেষ করেছিলেন তিনি। যদিও আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় কিছুটা মন ভারাক্রান্ত, তবে শেষমেষ ভারতকে ব্রোঞ্জ পদক এনে দিয়েছেন দীপ্তি। ইভেন্ট এর অন্যান্য খেলোয়াড়দের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ছিল। সবকিছু পেরিয়ে ভারতীয় বিশ্ব রেকর্ড এর মালকিন দীপ্তি জীবঞ্জিকে ব্রোঞ্জ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।
৪০০ মিটার দৌড়ে টি-টোয়েন্টি ইভেন্টে সোনা জিতেছেন ইউক্রেনের অ্যাথলেটিক ইউলিয়া শুলিয়ার। তিনি ৫৫.১৬ সেকেন্ডের মধ্যে দৌড় শেষ করেছিলেন। রুপো পেয়েছেন তুরস্কের অ্যাথলেটিক আয়সেল ওন্ডার। তিনি দৌড় শেষ ৫৫.২৩ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করেছিলেন।
দীপ্তি জীবঞ্জির খেলোয়াড় জীবনে এটি প্রথম পদক নয়। এর আগেও অনেক পদক ছিল তার ঝুলিতে। কোবেতে অনুষ্ঠিত হওয়া গত বছরের প্যারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এই একই ইভেন্টে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন তিনি। কোবেতে আয়োজিত গত প্যারা বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে এই ইভেন্টে সোনা জিতেছিলেন দীপ্তি। কোবেরে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নেশিপে ৫৫.০৬ সেকেন্ডের দৌড় শেষ করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। স্বর্ণপদক পাওয়াতে দেশের পক্ষ থেকে স্বভাবতই তার ওপর একটা ভরসা তৈরি হয়েছিল এই বছরের অলিম্পিকের জন্য। যদিও অন্যান্য খেলোয়ারদের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল পায়নি সে, তবে ভারতের জন্য ব্রোঞ্জ জিতে আনাও দেশের জন্য গর্বের বিষয়।
আরোও পড়ুন:- IBPS RRB 14তম নিয়োগ 2025: অফিসার ও ক্লার্ক পদে 13,217 শূন্যপদ – কীভাবে আবেদন করবেন?
তবে জানেন কি এই দীপ্তি জীবঞ্জির জীবন কাহিনী অনেকটাই করুণ। স্কুল জীবন থেকেই তাকে বিভিন্ন কটুক্তির সম্মুখীন হতে হয়। শুধু তাকেই নয়, তার বাবা-মাকেও বিভিন্ন কথার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তার চেহারা নিয়ে সমাজের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রকম কটূকথা ও সমালোচনা তার মনোবলকে কখনোই ভেঙে দিতে পারেনি। পাড়া-প্রতিবেশী ও সমাজের বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে তার বাবা-মাকে এমন কথাও শুনতে হয়েছে যে, তাদের মেয়ের মুখমণ্ডলের আকৃতি কিছুটা বানর বা পাগল বানরের ন্যায়। এমন মেয়েকে শিক্ষিত করে কি লাভ? এমন মেয়ের বিয়ে দেওয়া সোজা কথা নয়! অনেকের মতে আবার ভ্রান্ত বিশ্বাস ছিল সূর্য গ্রহণের সময় হয়তো এই মেয়ে জন্মগ্রহণ করেছিল বলেই এমন আকৃতির হয়েছে। তবে স্কুল জীবন এবং তার পরবর্তী খেলার জীবনের সমস্ত প্রতিকূলতাকে সরিয়ে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে তিনি আজ দেশের প্যারা অলিম্পিকের রেকর্ড ভেঙেছেন। এই দীপ্তি জীবঞ্জির লড়াইকে কুর্নিশ না জানালেই নয়। তার এই অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল তাকে ভারতীয় অ্যাথলেটিক হিসাবে শীর্ষস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। সে আরেকবার প্রমাণ করে দিয়েছে মানুষের রূপের থেকে গুণের কদর অনেক।




