পশ্চিমবঙ্গে কার্বন ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কত সুবিধা পাওয়া যাবে?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের অভিভাবকের আসনে বসার পর এই রাজ্যবাসীর জন্য বহু প্রকল্পের উদ্ভাবন ঘটিয়েছেন। তার প্রকল্পে ধনী মধ্যবিত্ত গরিব সকল শ্রেণীর মানুষই উপকৃত হয়েছে। সম্প্রতি একটি সংবাদ শোনা যাচ্ছে যে মুখ্যমন্ত্রী নাকি কার্বন ক্রেডিট কার্ড চালু করতে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য। এই কার্বন ক্রেডিট কার্ড শুধু একটি কার্ডই নয় এটি পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে বাস্তবমুখী সামাজিক এবং শিক্ষামূলক উদ্যোগ বলে বিবেচিত হবে। তবে এবার প্রশ্ন হল কার্বন ক্রেডিট কার্ড কি? এই প্রকল্প চালু উদ্দেশ্য কি রয়েছে সরকারের? ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য লেখাটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
কার্বন ক্রেডিট কার্ড কি?
এক কথায় বলতে গেলে কার্বন ক্রেডিট কার্ড হল পরিচয় পত্র বা ডিজিটাল রেকর্ড ব্যবস্থা যা একটি ব্যক্তির পরিবেশবান্ধব আচরণ ও কার্বন নিঃসরণ কে কমানোর চেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। শোনা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কার্বন ক্রেডিট কার্ড প্রথমে স্কুলের ইকো ক্লাবের ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমে চালু করবে। এই কার্বন ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পরিবেশ সচেতন কার্যকলাপ এর উপর ভিত্তি করে ব্রাউন পয়েন্ট পাওয়া যাবে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। এই ব্রাউন পয়েন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন ছাড়, পুরস্কার এমনকি বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যাবে।
কার্বন ক্রেডিট কার্ড এর উদ্দেশ্য কি?
কোনো প্রকল্প চালুর ক্ষেত্রে কোনো না কোনো উদ্দেশ্য অবশ্যই থাকে। কার্বন ক্রেডিট কার্ড চালুর পেছনেও রাজ্য সরকারের একাধিক উদ্দেশ্য রয়েছে সেগুলি হল-
১) ভবিষ্যতের জন্য উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
২) প্লাস্টিক ও বাজির ব্যবহার কমানো এবং পরিবেশকে রক্ষা করা।
৩) ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ কমানো।
৪) স্কুল স্তর থেকেই প্রতিটি নাগরিককে সমাজ সচেতন গড়ে তোলা।
৫) প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রা কে পরিবেশবান্ধব করে তোলা।
আরোও পড়ুন: প্যান কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে আপনার নামে কেউ ফেক লোন নিয়ে রাখতে পারে। কিভাবে বুঝবেন আপনি জালিয়াতির শিকার?
কোন স্তর থেকে এই কার্বন ক্রেডিট কার্ড শুরু করা হবে?
জানা গিয়েছে যে এই প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমে স্কুলের ইকো ক্লাবের সদস্যদের মাধ্যমে শুরু করা হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিদিনের কাজ হবে-
১) সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করা।
২) পরিবেশ রক্ষার জন্য বেশি করে গাছ লাগানো।
৩) জলের অপচয় বন্ধ করা।
৪) প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করা।
ব্রাউন্ড পয়েন্ট কিভাবে হিসাব করা হবে?
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইকো ক্লাব তাদের সদস্যদের জন্য একটি ট্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করবে প্রতিটি সদস্যদের জন্য।
১) ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার জন্য পয়েন্ট পাবে +১০
২) প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করার জন্য পয়েন্ট পাবে +৫
৩) আত্মীয়-স্বজনকে পরিবেশ সচেতন করে তুললে পাবে +৪
৪) বাজি ফাটানো বন্ধ করলে পাবে +১৫
৫) জলের অপচয় বন্ধ করলে পয়েন্ট পাবে +৬
এইভাবে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর মধ্যে পরিবেশ বান্ধব জীবনযাত্রা গড়ে উঠলে সরকারের একটি ডেটাবেজ সিস্টেম তৈরি হবে।
পরিবেশের জন্য রাজ্য সরকার কেন এই উদ্যোগ গ্রহণ করল?
বর্তমানকালে ভারতবর্ষে শিল্প, কৃষিকাজ, পরিবহন ও জ্বালানির জন্য কার্বন নিঃসরণ প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। আর এর ফলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং, বন্যা, খরা, মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট প্রতিনিয়ত বাড়তে চলেছে। এইগুলি থেকে বাঁচার জন্য মানুষের জীবনযাত্রা পরিবেশ বান্ধব করে তোলা অত্যন্ত জরুরী। সেই কারণে সরকার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদেরকেই পরিবেশ বান্ধব করে তুলতে চায়।
ব্রাউন পয়েন্টের মাধ্যমে কি পুরস্কার পাওয়া যাবে?
কার্বন ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ব্রাউন পয়েন্ট যুক্ত হবে। ডাউনপয়েন্ট যুক্ত হওয়ার ফলে ছাত্রছাত্রীরা বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা পাবে।
১) অনলাইনে শপিং করার জন্য ব্রাউন পয়েন্ট এর মাধ্যমে বিশেষ কিছু ছাড় পাওয়া যাবে।
২) সরকারি পরিবেশ সূচিতে ইনভাইট পাওয়া যাবে।
৩) বই কিনতে গেলে বিশ্বের ছাড়ের সুবিধা রয়েছে।
৪) সমাজে গ্রীন অ্যাম্বাসেডর হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যাবে।
৫) ব্রাউন পয়েন্টের মাধ্যমে স্কুলেও পুরস্কার পাওয়া যাবে।
বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা কি?
- পরিবহনের জন্য Ola, Uber
- অনলাইন সংস্থা Flipkart, Amazon, Big basket
- Swiggy, Zomato ইকো ফ্রেন্ডলি প্যাকিং।
- BookMyShow, INox পরিবেশ সচেতন সিনেমা এবং ইভেন্টে ছাড়।
রাজ্য সরকার এই সংস্থাগুলির সাথে Mou স্বাক্ষর করে point গুলিকে মার্কেট লেভেলে কার্যকর করতে চায়।
এই প্রকল্পের গুরুত্ব-
এই কার্বন ক্রেডিট কার্ড শুধু একটি কার্ড নয় পরিবেশ শিক্ষার আচরণ ও নাগরিক দায়িত্ব বোধ গড়ে তোলার একটি মাধ্যম বলা যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা আস্তে আস্তে নিজেদের কর্মকাণ্ডের ফল বুঝতে পারবে ও তারা একটি লক্ষ্য ধরে জীবনযাত্রা করতে শিখবে। এছাড়াও এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সমাজ সচেতন হয়ে উঠবে। এই কার্বন ক্রেডিট কার্ড চালু করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিবেশ রক্ষার ইতিহাসে এক মাইল ফলক তৈরি করবে তা স্বীকার্য।




