প্যান কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে আপনার নামে কেউ ফেক লোন নিয়ে রাখতে পারে। কিভাবে বুঝবেন আপনি জালিয়াতির শিকার?
প্যান কার্ড একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ নথি। PAN কার্ডে থাকা 10-সংখ্যার শনাক্তকরণ নম্বর যেটি ভারতের সমস্ত করদাতাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়ে থাকে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে অর্থাৎ ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করতে এছাড়া একজন নাগরিক হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে করদাতা হিসেবে এই প্যান কার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এই প্যান কার্ডে থাকা নম্বর ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে আপনার নামে কেউ ফেক লোন নিতে পারে। বর্তমানে জালিয়াতের প্রভাব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। নিত্য নতুন মাধ্যমকে ব্যবহার করে জালিয়াতি শুরু হয়েছে, যার শিকার হচ্ছেন সাধারণ নাগরিক। আগে প্যান কার্ড নাম্বার শুধুই মাত্র অর্থ দপ্তরের আধিকারিকদের কাছে উপলব্ধ থাকতো, বর্তমানে যেহেতু আধার কার্ড এবং ব্যাংক একাউন্টের সাথে প্যান কার্ডের নাম্বার লিঙ্ক করতে হয় তাই জন্য অন্যান্য সব ক্ষেত্রেই প্যান কার্ডের নম্বর উপলব্ধ হওয়া খুবই সহজ হয়ে গিয়েছে। এর ফলে প্রতারকদের কাছে প্যানকার্ডকে কাজে লাগিয়ে জালিয়াতির সুযোগ বেড়ে গিয়েছে। আপনার প্যান কার্ড নম্বর কাজে লাগিয়ে কেউ যদি ফেক লোন নিয়ে থাকে তাহলে আপনার ক্রেডিট স্কোরের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। সেই সাথে আরো কিছু সমস্যায় জড়িত হবেন আপনি। কি করে বুঝবেন আপনার প্যান কার্ড নম্বর ইস্যু করে কোন জালিয়াতি হয়েছে? যদিও আপনি জালিয়াতির শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে কিভাবে এর থেকে মুক্তি পাবেন কোথায় অভিযোগ করবেন এই সমস্ত তথ্য থাকতে আজকের এই প্রতিবেদনে।
প্যান কার্ড জালিয়াতি করে কেউ ফেক লোন নিয়েছে কিনা এই ব্যাপারটি অনেকেই প্রথম দিকে ধরতে পারেন না। যেহেতু ঋণের প্রয়োজন না হলে কোন ব্যক্তি ক্রেডিট স্কোর পরীক্ষা করেন না তার জন্যই জালিয়াতি ধরা পড়তে অনেক দেরি হয়ে যায়।
প্যান কার্ড জালিয়াতি বলতে বুঝায় আপনার প্যান নম্বর ব্যবহার করে কোন প্রতারক যদি লোন নিয়ে থাকে কিংবা কিছু কেনাকাটা করে থাকে তাহলে আপনার ক্রেডিট স্কোরের উপর একটা প্রভাব পড়বে এবং আপনার ক্রেডিট স্কোরঅনেক নিচে নেমে যাবে। যার জন্য পরবর্তীতে আপনার যদি লোনের প্রয়োজন হয়, তখন লোন পাওয়া দুষ্কর হতে পারে, এছাড়া আপনার নামে মিথ্যে আইনি কেস হতে পারে অর্থাৎ আপনি আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়তে পারেন।
কিভাবে আপনার প্যান কার্ড সুরক্ষিত রাখবেন :-
প্যান কার্ড নম্বর জালিয়াতি রুখতে সর্বপ্রথম আপনার প্যান কার্ডটি সুরক্ষিত রাখতে হবে। বর্তমানে জালিয়াতির হার অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে এর জন্য সব সময় সচেতনতা বৃদ্ধি করে সুরক্ষিত থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
১) সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে আপনার প্যান নম্বর অর্থাৎ ব্যক্তিগত প্যান নাম্বার আপনি কোন ব্যক্তির সাথে শেয়ার করবেন না।
২) আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টগুলি সুরক্ষিত রাখার জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং দুটি ধাপে প্রমাণিকরণ করে ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
৩) প্যান কার্ড নম্বর অন্য কেউ ব্যবহার করছে কিনা কিংবা আপনার নামে কোন লোন কেউ নিয়েছে কিনা এটা জানার জন্য নিয়মিত ক্রেডিট স্কোর চেক করুন।
৪) প্যান কার্ডের তথ্য এক্সেস করার জন্য কখনোই পাবলিক কম্পিউটার বা ওয়াইফাই ব্যবহার করবেন না।
৫) আপনার ব্যক্তিগত ডিভাইসকে পরিচালনা করার জন্য সব সময় সুরক্ষিত ইন্টারনেট সংযোগ এবং স্বনামধন্য এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন।
৬) ট্যাক্স ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক পোর্টালের মাধ্যমে প্যান কার্ডের তথ্য যাচাই করুন।
৭) প্রতারণামূলক কার্যকলাপ দেখার জন্য সতর্কতা হওয়ার জন্য অন্যদের প্রযুক্তি ব্যবহার করুন।
এই পদ্ধতি গুলো এপ্লাই করলে আপনি প্যান কার্ড জালিয়াতি রুখতে পারবেন এবং সতর্ক হতে পারবেন।
আরোও পড়ুন: জ্যাম পরীক্ষা ১৫ ফেব্রুয়ারি
একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন অন্য কোন জালিয়াতি যেমন খুব সহজে বুঝতে পারা যায়, তেমন প্যান কার্ড জালিয়াতি হঠাৎ করে বুঝতে পারা যায় না। এটি বুঝে উঠতে উঠতে আপনার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। যেমন, আপনার ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিলে আপনার ফোনে একটি মেসেজ আসে। আপনি বুঝতে পেরে যান কিন্তু প্যান কার্ড জালিয়াতি হলে আপনি বুঝতে পারবেন তখনই যখন আপনি ঋণ নিতে যাবেন এবং আপনার উচ্চ সুদের হার দেওয়া হবে অর্থাৎ ক্রেডিট স্কোর প্রভাবিত হবে, তখন আপনি বুঝতে পারবেন কিন্তু ততক্ষণে আপনার যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যাবে।
প্যান কার্ড জালিয়াতি রুখতে দুটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুবই দরকার। তার মধ্যে একটি হলো
১) ক্রেডিট স্কোর পরীক্ষা করা :- আপনার ক্রেডিট স্কোর পরীক্ষা করার জন্য CIBIL, Exprrian, Equifax, CRIF High Mark এই সমস্ত ব্যুরো সাহায্য নিতে পারেন। এগুলির মাধ্যমে আপনার প্যান কার্ডের সাথে হওয়া প্রতারণা এবং আর্থিক ক্ষতি সেই সাথে ক্রেডিট স্কোর সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। এর মাধ্যমে ক্রেডিট স্কোর পরীক্ষা করার জন্য কোন রকম চার্জ নেওয়া হয় না। তবে আপনি যদি এসব বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ পেতে চান তাহলে এই সমস্ত ব্যুরো সদস্য পদে যুক্ত হতে পারেন।
দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো ফর্ম ২৬ A :- এটি হল একটি ট্যাক্স ক্রেডিট স্টেটমেন্ট, যেখানে একজন ব্যক্তির প্যান নম্বরের সাথে সংযুক্ত সমস্ত কর-সম্পর্কিত তথ্যের বিবরণ দেওয়া থাকেন এতে মোট প্রাপ্ত পরিমাণ, কাটা টিডিএস, উৎসে সংগৃহীত কর, প্রদত্ত অগ্রিম কর, টিডিএস কর্তনকারীর বিবরণ ইত্যাদি তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই ফর্মে মুলতুবি থাকা কার্যক্রম, কর ফেরত এবং উচ্চ-মূল্যের লেনদেনের বিবরণও দেখা যায়। আয়কর বিভাগ প্রতি আর্থিক বছরের জন্য এটি জারি করে এবং এটি TRACES পোর্টাল থেকে ডাউনলোড করে নেওয়া যায়।
সর্বোপরি প্যান কার্ড জালিয়াতি রুখতে এবং আপনার নামে ফেক লোন কেউ যদি না নিতে পারে তার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে রাখা আপনার জন্যই ভালো।
১) কোনো কাজের ক্ষেত্রে যে সমস্ত ক্ষেত্রে ডকুমেন্ট দেখানোর দরকার সেখানে যদি সম্ভব হয় প্যান কার্ড ব্যতীত অন্য নথিগুলো প্রদর্শন করুন।
২) অজানা কোন অনলাইন পোর্টালে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার সময় নিজের পুরো নাম এড্রেস না দেওয়াই বাঞ্ছনীয়।
৩) ২৬ A ফর্মে মাধ্যমে আপনার আর্থিক বছরের ইতিহাস পরীক্ষা করুন এবং আপনার আর্থিক বছরের লেনদেন সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা নিন।
৪) CIBIL ওয়েবসাইট ব্যবহার করে নিয়মিত ক্রেডিট স্কোর পরীক্ষা করুন।
জানবেন যেকোনো সমস্যা আসতে বেশি সময় লাগে না, বিশেষ করে বর্তমান সময়ে প্রতারকদের জালিয়াতি বিভিন্ন মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে করা হচ্ছে আর তার মধ্যে প্যান কার্ড জালিয়াতি অন্যতম। এই জন্য সবসময় সতর্ক থাকা এবং সচেতনতা অবলম্বন করা জরুরী।




