বাংলার বাড়ি প্রকল্পের দ্বিতীয় দফার PWL তালিকা প্রকাশ করা হলো, কবে থেকে টাকা দেওয়া শুরু।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার বাড়ি প্রকল্পের মাধ্যমে দ্বিতীয় দফার PWL চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার জন্য নবান্নের তরফে ৬ দফা যাচাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বাংলার বাড়ি প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ২৮ লক্ষ উপভোক্তাকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ২৮ লক্ষ উপভোক্তাকে একসাথে টাকা দেওয়া হবে না বলেই জানিয়েছিলেন তিনি। এইজন্য প্রথম দফায় ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে টাকা দেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে এই প্রথম দফার ১২ লক্ষ উপভোক্তা ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পেয়ে গিয়েছেন। প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছিল ২০২৪ এর ডিসেম্বরের দিকে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছে ২০২৫ এর শুরুর দিকে। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় দফার আরো ১৬ লক্ষ বাংলার বাড়ি প্রকল্পের উপভোক্তাকে প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। নবান্ন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়ার আগে ১৬ লক্ষ উপভোক্তার বাড়ি যাচাই প্রক্রিয়া করানো হবে। এইজন্য জেলার বিডিও, এসডিওরা উপভোক্তাদের বাড়ি গিয়ে গিয়ে সার্ভে করবেন। এই সার্ভে করার কারণ যাতে যোগ্য উপভোক্তারা বাংলার বাড়ি প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধা পেতে পারেন। সার্ভে করার পরেই প্রকৃত উপভোক্তাদের নামের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে নবান্নের মাধ্যমে। ২০২৫ এর শেষের দিকেই উপভোক্তাদের ব্যাংক একাউন্টে প্রথম কিস্তির টাকা ঢুকে যাবে। বাংলার বাড়ি প্রকল্পের দ্বিতীয় দফার PWL তালিকায় কাদের নাম রয়েছে? কাদের নাম বাতিল হবে এবং নতুন করে যারা বাংলার বাড়ি প্রকল্পে আবেদন করতে চাইছেন তারা কিভাবে আবেদন করবেন এই সমস্ত আপডেট দেওয়া হবে আজকের এই প্রতিবেদনে।
আপনারও যদি দ্বিতীয় দফার PWL তালিকায় নাম আছে কিনা জানতে ইচ্ছুক থাকেন এবং কবে টাকা ব্যাংক একাউন্টে ঢুকবে ও আরো অন্যান্য তথ্য জানার জন্য প্রতিবেদনটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে ফেলুন।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোর মাথার উপর ছাদ গড়ে দেওয়ার জন্য বাংলার বাড়ি প্রকল্পে সূচনা করেছিলেন ২০২২ সালে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোর মাথার উপর ছাদ গড়ে দেওয়ার জন্য দুই কিস্তিতে ১ লক্ষ্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। যে সমস্ত বাড়ির ছাদ ভাঙ্গা, ছাদ দিয়ে জল পড়ে বা যাদের মাথার উপর শক্ত ছাদ নেই সে সমস্ত উপভোক্তাদের অর্থাৎ প্রকৃতযোগ্য উপভোক্তাদের এই বাংলার বাড়ি প্রকল্পের মাধ্যমে অনুদান দেওয়া হয়।
বাংলার বাড়ি প্রকল্পের ২৮ লক্ষ উপভোক্তাকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এইবার রাজ্য সরকারের তরফে দ্বিতীয় দফার প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। তবে টাকা দেওয়ার আগে নবান্নের তরফের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রত্যেক উপভোক্তার বাড়ি সরজমিনে যাচাই প্রক্রিয়া করা হবে অর্থাৎ এইবারে আরো বেশি নজরদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে টাকা দেওয়ার আগে। যদি কোন উপভোক্তার নাম তালিকা অন্তর্ভুক্ত না থাকে তাহলে তিনি অভিযোগ জানাতে পারবেন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে। এইবারের বাংলার বাড়ি প্রকল্পের উপভোক্তাদের মধ্যে যোগ্য উপভোক্তাদের নির্বাচন করার জন্য স্পেশাল সোশ্যাল অডিট টিম গঠন করা হবে। এরা তাদের পছন্দ মতন তালিকা যাচাই করবে। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও ক্রস ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া চালানো হবে। প্রতিটি ব্লকের থানার ওসি, আইসি ও রাজ্যের মনিটরিং দল বিভিন্নভাবে যাচাইকরন প্রক্রিয়া করবেন। জানা যাচ্ছে, এইবারে সার্ভে প্রসেসে বিডিওরা ১৫ শতাংশ, এসডিওরা ৫ শতাংশ এবং জেলা অফিসাররা ২ শতাংশ হারে যাচাইকরন প্রক্রিয়া করবেন। যদি কোন উপভোক্তা অভিযোগ জানাতে চান তাহলে যাচাইকরন প্রক্রিয়ার ৫ দিনের মধ্যে এসডিও বা বিডিও অফিসে এসে অভিযোগ জানাতে হবে।
আরোও পড়ুন :- কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ভর্তুকি দেওয়া শুরু রাজ্য সরকারের, কিভাবে করবেন আবেদন? জানুন বিস্তারিত।
নবান্নের তরফে নির্দেশ :-
নবান্নের তরফের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৩০ শে নভেম্বরের মধ্যে ৬ দফার যাচাইকরন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে হবে। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার আগে খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে।
নবান্ন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ১০ই অক্টোবর এর মধ্যে দ্বিতীয় দফার উপভোক্তদের তালিকার পুনমূল্যায়নের কাজ শেষ করতে হবে। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে উপভোক্তাদের বাড়ি সরজমিনে গিয়ে বিডিও, এসডিও অফিসারদের দেখতে হবে উপভোক্তারা এই প্রকল্পের যোগ্য কিনা। ৩ রা নভেম্বরের মধ্যে খসড়া তালিকা তৈরি করে জেলাশাসক, পঞ্চায়েত অফিসারদের সেই তালিকা দেখতে হবে। এরপর ১০ই নভেম্বরের মধ্যে এই তালিকা উপভোক্তাদের সবাইকে দেখাতে হবে। যদি কোন উপভোক্তার নাম এই তালিকা থেকে বাদ যায় তবে সে পঞ্চায়েত অফিসের মাধ্যমে বা বিডিও অফিসের মাধ্যমে অভিযোগ জানিয়ে অনুমোদন করিয়ে ১৭ ই নভেম্বরের মধ্যে বিডিও অফিসে পাঠাতে হবে। সর্বশেষ ৩০ শে নভেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর বাংলার বাড়ি প্রকল্প বাংলার মানুষদের জন্য এক অভিনব প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৮ লক্ষ বাংলার বাড়ি প্রকল্পের উপভোক্তাকে বিধানসভা নির্বাচনের আগেই টাকা দিয়ে দেওয়ার ভাবনা ভেবেছেন। অন্যদিকে, যেমন লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের টাকা বৃদ্ধি করার কথাও চিন্তা করেছেন, তেমনি ভোটের আগেই বাংলার বাড়ি প্রকল্পের উপভোক্তাদের টাকা দিয়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছেন। এই নিয়ে অনেক বিরোধী রাজনৈতিক মহলে ভাবনা ভাবা হচ্ছে যে, লক্ষীর ভান্ডার উপভোক্তা এবং বাংলার বাড়ি প্রকল্পের উপভোক্তাদের থেকে অনেকটাই ভোট আশা করা যায় আর তাই জন্য ভোটের আগেই বাংলার বাড়ি প্রকল্পের অনুদান দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, বাংলার বাড়ি প্রকল্প সূচনা হওয়ার আগে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মিলিত প্রয়াস হিসেবে কেন্দ্রীয় তরফ থেকে ৬০ শতাংশ টাকা দেওয়া হতো এবং রাজ্যে তরফে ৪০ শতাংশ টাকা দেওয়া হতো। কিন্তু এই রাজ্যের ৪০ শতাংশ দেওয়ার মধ্যে কোন ক্রেডিট রাজ্য সরকার পেতেন না। কারণ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের বাড়ির বাইরে প্রধানমন্ত্রীর ছবি দেওয়া থাকতো আর তাতে রাজ্য সরকারের অবদান বলে কোন কিছু উল্লেখ ছিল না। তাই ২০২২ সালে রাজ্য সরকার নিজের থেকেই বাংলার বাড়ি প্রকল্পের সূচনা করেন, যেখানে এই প্রকল্পের সমস্ত অনুদান রাজ্য সরকার বরাদ্দ করেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে 28 লক্ষ উপভোক্তাকে একসঙ্গে টাকা দেওয়ার এই ব্যাপার অনেকটাই ক্রেডিট পাওয়ার মতোই। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এবারও মুখ্যমন্ত্রী অনেকটাই এগিয়ে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
যোগ্য ব্যক্তিরা কবে টাকা পাবে :- নভেম্বরের মধ্যেই নবান্ন নির্দেশের ৬ দফা যাচাই প্রক্রিয়া শেষে যোগ্য উপভোক্তারা টাকা পেয়ে যাবেন।
তালিকা থেকে কাদের নাম বাদ পড়বে :- যে সমস্ত উপভোক্তাদের নাম তালিকায় রয়েছে, কিন্তু তাদের আগের থেকে ছাদের বাড়ির ছিল, বা তাদের মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকার বেশি এবং ইনকাম ট্যাক্স দিয়ে থাকেন এই সমস্ত উপভোক্তাদের নাম তালিকায় থাকলে তাদের নাম বাতিল হবে।
নতুনদের আবেদন পদ্ধতি :-
যে সমস্ত দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার রয়েছে যাদের এখনো ছাদের বাড়ি নেই, অথচ এখনো পর্যন্ত বাংলার বাড়ি প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করেননি, তারা অবশ্যই আপনাদের নিকটবর্তী বিডিও অফিসে বা পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করুন। আপনারাও এই বাংলার বাড়ি প্রকল্পের মাধ্যমে এটি ছাদের বাড়ি পাবেন।



